কথা-বলা হাতি!
৬ নভেম্বর ২০১২আপনি পাশ দিয়ে যাচ্ছেন, হাতিটা বলে উঠল, ‘‘হ্যালো!'' তারপর বলল, ‘‘বসুন''৷ আপনাকে বসতে দেখে আবার বলে উঠল ‘‘শুয়ে পড়ুন৷'' শুয়েছেন দেখে বলল, ‘‘ভালো৷'' খানিকক্ষণ শুয়ে থাকার পর যেই না উঠতে গেলেন অমনি হাতি চেঁচিয়ে উঠল, ‘‘না!'' হয়তো ভাবছেন এটা নিশ্চয়ই অলীক কল্পনা৷ আপনার আর কী দোষ, হাতি মানুষের মতো কথা বলতে পারে শুনে তো বিজ্ঞানীরাও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না৷
দক্ষিণ কোরিয়ার এভারল্যান্ড চিড়িয়াখানার একটা হাতি যে মানুষের মতো কথা বলতে পারে তা সেখানকার অনেক মানুষই জানতেন না৷ কোশিক নামের সেই হাতির মুখ থেকে বেরোনো কিছু শব্দ রেকর্ড করে ইউটিউবে দেয়া হয়েছিল৷ সেখানে দাবি করা হয়েছিল, কোশিক কোরীয় ভাষায় কথা বলতে পারে৷ ভিডিও দেখে অস্ট্রিয়ার জীববিজ্ঞানী আঙ্গেলা কোয়েগনার তো অবাক! বিশ্বাস হচ্ছিল না ব্যাপারটা৷ ঘটনা সত্যি কিনা তা জানার কৌতুহল সংবরন করতে পারছিলেন না৷ তাই নিজে চলে গেলেন দক্ষিণ কোরিয়ায়৷ গিয়ে দেখেন কোশিক সত্যিই তাঁর মুখে শুঁড় লাগিয়ে এমন শব্দ করে যা শুনে মনে হয় মানুষই যেন কথা বলছে৷
কী বলছে, যা বলছে তার আদৌ কোনো অর্থ আছে কিনা বোঝার জন্য কোয়েগনার এমন কিছু লোক জড়ো করলেন যারা আগে কখনো হাতিটিকে দেখেননি৷ তাঁদের সবাইকে আলাদাভাবে শোনানো হলো কোশিকের শুঁড় মুখে গুজে বের করা বিশেষ কিছু শব্দ৷ বলা হলো, শব্দগুলো কোরীয় কোনো শব্দের সঙ্গে মেলে কিনা শুনে দেখতে আর যদি খুব মিল থাকে তাহলে কোরীয় যে শব্দগুলোর সঙ্গে মেলে সেগুলো ক্রমান্বয়ে লিখতে৷ অধিকাংশ শ্রোতাই লিখলেন ‘‘আন্নিয়ং'', ‘‘আনজা'', ‘‘আনিয়া'', ‘‘নুয়ো'' এবং ‘‘চোয়াহ''৷ কোরীয় ভাষায় এসবের অর্থ যথাক্রমে ‘‘হ্যালো!'', ‘‘বসুন'', ‘‘শুয়ে পড়ুন'', ‘‘ভালো'', এবং ‘‘না ''৷
এরপর অনেক বিজ্ঞানীই গিয়েছেন এভারল্যান্ড চিড়িয়াখানায়৷ দেখে অবাক হয়েছেন কোশিককে৷ হাতি আর মানুষের শারীরিক গঠনের মতো স্বরপ্রণালীও তো কোনো তুলনাতেই আসার অযোগ্য৷ শুধু মানুষের ঠোঁটের পাশে হাতির শুঁড় কল্পনা করলেই তো ভেবে পাবেননা এত মোটা গলার সঙ্গে এত বড় একটা শুঁড়কে ব্যবহার করে কোশিক কী করে মানুষের মতো শব্দ করছে?
বিজ্ঞানীরাও পারেননি রহস্যটা উদঘাটন করতে৷ মানুষ যেমন করে নর্তকীর নাচ কিংবা আনন্দের কোনো দৃশ্য দেখে বিশেষ কায়দায় মুখে দুটো আঙ্গুল পুরে সিটি বাজায়, দক্ষিণ কোরিয়ার চিড়িয়াখানার এক চিড়িয়া যে সেই কৌশলে তাক লাগিয়ে দিয়েছে তা তো বোঝাই যায়৷ কিন্তু কথা হলো একটা হাতি কেন ওভাবে মানুষের মতো কথা বলার চেষ্টা করতে যাবে? চেষ্টা করে সফলইবা হলো কী করে?
হাতির ডাককে কী করে কোশিক মানুষের কন্ঠস্বরের প্রায় সমতুল্য করল সেটা বোঝার মতো প্রযুক্তি এখনো আবিষ্কৃত হয়নি৷ ড, কোয়েগনারের কন্ঠেও এই আক্ষেপই ঝরেছে৷ বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের তো এমন এক্স রে নেই যার সহায়তায় বুঝতে পারবো ওর (কোশিক) মুখের ভেতরে কী হচ্ছে৷ তবে ও যে তার মানুষ-সঙ্গীদের সঙ্গে মেলানোর মতো শব্দ করার বিশেষ একটা উপায় বের করে ফেলেছে তা অনুমান করা যায়৷'' কেন তাকে এমন করতে হলো?
একাকীত্ব ঘোচাতে৷ হ্যাঁ, বিজ্ঞানীদের সেরকমই ধারণা৷ জানা গেছে ৫ থেকে ১২ বছর - নিজের জীবনের এই সময়টায় কোশিকের ধারেকাছে কোনো হাতি ছিলনা৷ ছিল শুধু মানুষ৷ মানুষের সঙ্গে কথা বলবে কী করে? কথা না বলে ভাব বিনিময় করা প্রায় অসম্ভব৷ অন্যের সঙ্গে ভাববিনিময় করা যে যে কোনো প্রাণীরই স্বাভাবিক প্রবণতা এটা কে না জানে! ড. কোয়েগনারের মতে এ কারণেই মানুষের সঙ্গে মিতালী করতে খুব আগ্রহী হয়ে ওঠে কোশিক আর সেই আগ্রহ প্রসূত চেষ্টারই সুফল অবাক করা সাফল্য, ‘‘ওর শুধু মানুষের সঙ্গেই যোগাযোগ ছিল৷ আমরা মনে করি কোশিক তার সঙ্গীদের সঙ্গে সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করতেই কন্ঠস্বরে এমন পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছে৷''
জগতে মানুষে মানুষে কত হানাহানি! সেই জগতেই একটা হাতি মানুষের সঙ্গে মিতালী করতে কত মরিয়া! অবাক কাণ্ড, তাই না?
এসিবি/এএইচ (এপি, ইন্টারনেট)